বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

আওয়ামী লীগের সর্বব্যাপী সহিংসতা


২০১১-১২-২৩

একাত্তরের বিজয় দিবস ছিল শত নির্যাতন এবং আত্মত্যাগে ক্লান্ত জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উল্লাস ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। শেখ মুজিবুর রহমান সে দিন ঢাকায় ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময়টাও তিনি রণাঙ্গনে ছিলেন না, ২৫ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে তিনি আপসে ধরা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও কেউ পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশ নেয়া তো দূরের কথা। তারা ২৫ মার্চ রাতে এবং পরবর্তী দিন-দুয়েকের মধ্যে কলকাতা চলে যান।
স্টেটসম্যান পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সন্তোষ বসাক ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ায় আমাকে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউসে নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা সেসব হোটেলে থাকতেন এবং যাবতীয় ব্যয়ের ভাউচার (কারো কারো ফুর্তি করার বিলসহ) সই করতেন। সেসব বিল পরিশোধ করত ভারত সরকার। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ নেয়ার আগে তাদের কোনো স্বীকৃত মর্যাদাও ছিল না, তারা ছিলেন একটি বিদেশী রাষ্ট্রের পলাতক রাজনীতিক। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা ভোগ করেছেন তারা। ভারতের আজ্ঞা অমান্য করা বহু আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষেই সম্ভব নয়। দেশে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে আর যারা পাকিস্তানিদের হাতে প্রাণ দিয়েছে এবং তাদের নির্যাতন সয়েছে কলকাতায় পলাতক নেতারা তাদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও জওয়ানেরা এবং বিডিআরের সদস্যরা আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস'ত ছিলেন। মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই তারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকেরা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সমর্থকেরা জনসাধারণকে উদ্দীপিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। ছাত্র-অছাত্র তরুণেরা ঘর ছেড়ে চলে গেল মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে। সাধারণ শ্রমজীবী ও সংসারী মানুষ যথাসাধ্য হানাদার বাহিনীর সাথে অসহযোগিতা ও প্রতিরোধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তারা আশ্রয় দিয়েছেন, নিজেদের থালার ভাত তাদের সাথে ভাগ করে খেয়েছেন। বিনিময়ে বহু নির্যাতন-নিপীড়ন তারা সহ্য করেছেন। অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, বহু নারী হয়েছেন নিগৃহীত। একাত্তরের বিজয় দিবসে উল্লাস করেছেন তারা।
কিন' কয়েক দিনের মধ্যেই সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল। তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ের গর্তগুলোর মোটামুটি মেরামতের কাজ শেষ হতেই কলকাতার বিলাসব্যসন ছেড়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে উড়ে এলেন। এসেই নতুন স্বাধীন দেশের মালিকানা দাবি করলেন তারা, আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার গঠন করলেন। শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন হয়ে ঢাকা গেলেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২, তারপর তিনি হলেন একচ্ছত্র অধিপতি। জাসদ ও ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদের মানুষ এবং বুদ্ধিজীবীরা একটা জাতীয় সরকার গঠনের ক্ষীণ দাবি তোলেন। জবাবে শেখ মুজিব ‘লাল ঘোড়া দাড়াইয়া দিব’ ঘোষণা দিলেন। রক্ষীবাহিনী ৪০ হাজার জাসদ ও অন্যান্য দলের কর্মীকে হত্যা করল। নিহত নেতাদের একজন ছিলেন সিরাজ শিকদার। গ্রেফতারের পর পিঠে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। অন্তত আরো পাঁচ বছর যাতে মুজিবের রাজনৈতিক বিরোধিতা না থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সম্পূর্ণ বিনা প্রয়োজনে একটি বিতর্কিত ও বিভাজক মেয়াদ-মধ্য নির্বাচন করা হলো। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি গড়ে তোলার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।

বাংলাদেশের বড় ট্র্যাজেডি
বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসের এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ট্র্র্যাজেডি। আরো বহু ট্র্যাজেডি ঘটেছে, কিন' সেসবেরই উৎস হচ্ছে এখানে। আওয়ামী লীগ সেই যে ‘যা কিছু পাই লুটেপুটে খাই’ পথ ধরেছে তার তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে গেছে। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে ভারত থেকে ফিরেই ঘোষণা দিলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেনা অভ্যুত্থান ও মুজিব হত্যার পরবর্তী বিক্ষুব্ধ পরিসি'তিতে যারাই রাষ্ট্র তরণীর হাল ধরেছিলেন, দেশটার অস্তিত্ব কোনো মতে টিঁকিয়ে রেখেছিলেন, তারা সবাই খুনি। কিন' সে সময় তাদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্বই যে ধুয়েমুছে যেতে পারত, সে কথা বিবেচনা করার মতো বিচক্ষণতা আওয়ামী লীগ নেত্রী দেখাতে পারেননি।
শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘চোর চোর’ বলে অভিযোগ তোলেন। কিন' বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপান ও অন্য দাতা দেশগুলো এ সরকারকেই চোর বলছে, চুরির তদন্ত ও অবসান না হলে তারা বাংলাদেশকে আর ঋণ দিতে অস্বীকার করছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে তিনি নতুন বছরে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, অর্থনীতিতে কোনো সমস্যা নেই, ‘সব কুচ ঠিক হায়’।
তিনি ছেলেপুলে, আর সভাসদ নিয়ে প্রায়ই বিদেশে কারণে-অকারণে ভ্রমণে যাচ্ছেন, দু’হাতে বিদেশী মুদ্রা উড়াচ্ছেন। এ দিকে তার অর্থমন্ত্রী দফায় দফায় নানাভাবে বলে যাচ্ছেন অর্থনীতির বারোটা বেজে গেছে, নাভিশ্বাস উঠেছে।
বাংলাদেশ এখন এমনভাবে চলছে যেন একজনই এর অধিশ্বর। তার নির্দেশে একটা ফ্যাসিস্ট সংগঠন বাহুবলে, অস্ত্রবলে সব গণতান্ত্রিক শক্তির টুঁটি টিপে মারার চেষ্টা করছে। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ‘, ‘যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা ব্যাটাই চোর’ ইত্যাদি ধরনের বহু সার্থক উপমাকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আরো অর্থবহ করে তুলেছেন। দেশে ইদানীং ছিনতাই, গুম-খুন ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রকম বেড়ে গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে গুম ও খুন হচ্ছেন বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সব কিছুর জন্যই দায়ী খালেদা জিয়া, কেননা তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে চান। খালেদা জিয়া তার সমর্থকদের খুন করাচ্ছেন- এ কথা শুধু উন্মাদেই বিশ্বাস করবে।
এ কথা শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ নেতারা স্বীকার করতে চান না- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রথম এবং প্রধান বিরোধী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের প্রথম কাতারে পড়ে অপরাধী শত্রুপক্ষের সৈন্যরা। একাত্তরের হামলায় যে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যে ১৯৫ জনকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধাপরাধী বলে শনাক্ত করা হয়েছিল; কিন' শেখ মুজিবুর রহমান তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন। তার যুক্তি ছিল পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা দূর করে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। স্বদেশে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন সামাজিক শান্তি ও সদ্ভাব স'াপনের লক্ষ্যে। তার সে উদ্যোগ তখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন' বর্তমান আওয়ামী লীগ মুজিবের আওয়ামী লীগ নয়; বরং হিটলারের নাৎসিদের সাথেই এ দলের তুলনা চলে। একাত্তরের রাজাকার-আলবদরদের অনেকে আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছেন। কেউ কেউ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সাথে আত্মীয়তা গড়ে তুলেছেন। তাদের গায়ে কেউ টোকা দেয় না।
বর্তমানে বাংলাদেশে কী ঘটছে? হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশালী স্বৈরতন্ত্রের মতো একটি স্বৈরশাসন স'াপন করতে চান। মুজিব তিন মিনিটে সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল করেছিলেন, আজীবন রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে নিজেকে সাত বছরের জন্য নির্বাহী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। সংসদে আপত্তি করার মতো সৎ সাহস কারো ছিল না। কিন' বাংলাদেশের মানুষ তখনো প্রতিবাদ করেছেন, এখনো করছেন। পঁচাত্তরের সাথে তফাৎ এখানে যে অনেক পুড়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রীরা খাঁটি সোনা হয়েছেন, তারা সক্রিয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করছেন। এ সরকারের সেটা সহ্য হচ্ছে না। হিটলারের স্টর্ম ট্রুপার আর গেস্টাপোর মতো আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার, আর সম্পূর্ণ দলীয়কৃত পুলিশ-র‌্যাব উপলক্ষ পেলেই গণতন্ত্রীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সমস্যা হচ্ছে, কে পুলিশ আর কে পুলিশ নয় বোঝার উপায় নেই। তবে তারা বিরোধীদের নির্যাতন করছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কেউ ইউনিফর্ম পরছে, আর কেউ পরছে না- তফাৎ শুধু এখানে।

বিজয় দিবস- তখন এবং এখন
একাত্তরে যে বিজয় দিবস ছিল সংগ্রামী-অসংগ্রামী জনতার, সে বিজয়কে এবং সে বিজয় দিবসকেও ওরা ছিনিয়ে নিতে চায়। এবারের বিজয় দিবসের বিশেষ তাৎপর্য ছিল, এটা ছিল মুক্তির ৪০তম বার্ষিকী। কিন' সে বিশেষ অনুষ্ঠানের পবিত্রতা নষ্ট করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। আগের দিন (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় স্মৃতিসৌধের পথে ব্যানার আর ফেস্টুন লাগিয়েছিল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির কর্মীরা এবং অন্যরা। রাতের বেলা শাসক দলের লোকজন বিএনপির ব্যানার আর ফেস্টুনগুলো ছিঁড়ে ফেলে।
বিজয় দিবসের প্রভাতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ৯ বছর স'ায়ী এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার আপসহীন সংগ্রাম বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে, তিনবার তিনি জনসাধারণের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং বর্তমানেও তিনি বিরোধী দলের নেতা। আওয়ামী লীগের কর্মীরা খালেদা জিয়ার পথরোধ করেন। তাদের ধারণা, শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাবেন তাদের নেত্রী, বিএনপির নেত্রী নন। সারা দেশে বিএনপির বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, খুনখারাবি আর ভাঙচুর করেছে এরা। অর্থাৎ গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিলো, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের অধিকারও আওয়ামী লীগ ছিনিয়ে নিলো। ওই যে বলছিলাম : যা কিছু পাই লুটেপুটে খাই।
আসলে শহীদদের, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা আওয়ামী লীগের একটা রাজনৈতিক হাতিয়ার মাত্র- অনেকটা তাদের লগি-লাঠি-বৈঠারই মতো। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয়, লাখে লাখে তারা মুক্তিযুদ্ধের সনদ দিচ্ছেন এমন লোকদের ১৯৭১ সালে যাদের অনেকের জন্মই হয়নি। তারা আশা করছেন, এ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রাজনৈতিক ক্যাডারভুক্ত হবেন, নিদেন তাদের ভোট দেবেন।
গত রোববার বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। দেশের বিভিন্ন স'ান থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেটা সরকারের এবং শাসক দলের সহ্য হয়নি। দেশজুড়ে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল তারা। ঢাকার পথে যেসব বাসে মুক্তিযোদ্ধারা এসেছিলেন আওয়ামী পুলিশ তাদের গতিরোধ করেছে, আওয়ামী লীগের লোকেরা দলীয়কৃত পুলিশের প্রটেকশনে থেকে সেসব বাস ভাঙচুর করেছেন, আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন যানবাহনে। তারপর পুলিশ তাদের প্রভুদের নির্দেশে গণ্ডা গণ্ডা মামলা রুজু করেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

ফ্যাসিবাদী তাণ্ডব
আরো ভয়ঙ্কর তাণ্ডব সৃষ্টি হয়েছিল দেশের রাজধানীতে। যারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যাচ্ছিলেন তাদের ওপর লাঠিপেটা করা হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে, দলের নেতাকর্মীদের নিজেদের দফতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভীতি প্রদর্শনের জন্য সে দফতরের সামনে বোমা ফাটানো হয়েছে। গোড়া থেকেই এ সরকার বিএনপিকে সব ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। সভা কিংবা সমাবেশ করার স'ান তাদের দেয়া হচ্ছে না, তারা মিছিল করলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও পুলিশ সেসব মিছিলে চড়াও হচ্ছে, যখন-তখন বিএনপির দফতর ঘেরাও করা হচ্ছে, কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেয়া হচ্ছে সে দফতর। কিন' কেন? দেশে কি এখন রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস'া আছে? বিএনপি কি কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? তাই প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে- কোন যুক্তিতে আর কোন অধিকারে সরকার এসব জঘন্য ফ্যাসিবাদী কাণ্ডকারখানা করছে?
একাত্তরে পাকিস্তানিরা অস্ত্রবলে বাংলাদেশকে পদাবনত রাখতে চেয়েছিল। তাদের সৈন্যরা মানুষ হত্যা করেছে, নারী নির্যাতন করেছে। তাদের ঘাতকেরা মানুষ ছিনতাই করেছে, গুম করেছে, খুন করেছে। তার সাথে আজকের বাংলাদেশের কোনো তফাৎ আছে কি? একটি ফ্যাসিবাদী দল চিরস'ায়ীভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে চায়। দলীয়কৃত পুলিশ ও র‌্যাব গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হামলা করছে, নিরীহ মানুষও হত্যা করছে তারা। কারা গত বছর ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার আলম চৌধুরীকে অপহরণ করেছিল? অদ্যাবধি তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে অপহরণ আর গুপ্তহত্যা বেড়েই চলেছে। গত দু-তিন মাসে গুম-খুনের যেন তাণ্ডব চলছে। বিজয় দিবসের ৪০তম বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সর্বব্যাপী সহিংসতা চরমে উঠেছে।
(লন্ডন ২১-১২-১১)
serajurrahman@btinternet.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন