বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

এ দৈত্য আর বোতলে ফিরে যাবে না


২০১১-১০-২৮

তিউনিসিয়ার ৭০ লাখ মানুষ গত ২৩ অক্টোবর খুবই শান্তিপূর্ণ, বলতে গেলে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। সেটা খুবই প্রত্যাশিত ছিল। কেননা, ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর এই প্রথম এরা নিজেদের নির্বাচিত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পেল। এর আগেও তাদের কেউ কেউ ভোট দিয়েছে, কিন' প্রতিবারই ভোট দিতে হয়েছে ক্ষমতাসীন ডিক্টেটরদের।
গত জানুয়ারি মাসে এক গ্র্যাজুয়েট বেকার ফুটপাথে ফল বিক্রি করছিল। পুলিশ বিনা লাইসেন্সে ব্যবসায় করার দায়ে তার ফলগুলো বাজেয়াপ্ত করে। লাইসেন্সের আবেদন নিয়ে সে স'ানীয় মিউনিসিপ্যালিটির আপিসে যায়, কিন' হতাশ হয়ে ফিরে আসে। হতাশা আর অপমানে এবং অভুক্ত পরিবারের কথা মনে করে সে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিউনিসিয়ার জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তথাকথিত আরব বসন্তের এই ছিল সূচনা। অল্প কিছু দিনের আন্দোলনের জোয়ারেই প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেনআলি সপরিবারে সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। গত রোববারের নির্বাচন ছিল তারই ফল।
আরো একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে গত ২৩ অক্টোবর। লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (এনটিসি) নেতা বিচারপতি মোস্তাফা আবদুল জলিল বেনগাজির এক বিশাল জনসমাবেশে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, লিবিয়ার স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ হয়েছে, লিবীয়রা স্বাধীন হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, লিবিয়া একটি ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক জাতিতে পরিণত হবে। লিবিয়া ও মিসরের জনতা তিউনিসিয়ার আন্দোলনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছিল। মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ১৯৮১ সালে আনোয়ার সাদাতের হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হন। অপ্রতিরোধ্য গণ-আন্দোলনের মুখে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বর্তমানে তার ও তার পুত্রদের বিচার চলছে কায়রোর আদালতে।
লিবিয়ার কর্নেল মুয়াম্মার গাদাফি ১৯৬৯ সালে এক অভ্যুত্থানে বাদশাহ ইদ্রিসকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তিউনিসিয়ার অনুপ্রেরণায় গণতন্ত্রের দাবিতে গণ-আন্দোলন শুরু হলে গাদাফি সংস্কারের দাবির জবাবে সশস্ত্র বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলন দমন করার প্রয়াস পান। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাদ্দাফির নৃশংসতার নিন্দা করে প্রস্তাব পাস করে। এ প্রস্তাবে কিছু বিশেষত্ব ছিল। সাধারণত পশ্চিমী পক্ষ কোনো প্রস্তাব পাস করতে চাইলে রাশিয়া ও চীন প্রায়ই ভেটো প্রয়োগের হুমকি দেয় অথবা প্রকৃতই ভেটো দিয়ে বসে। কিন' সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে তারা বাধা দেয়নি। এমনকি আরব লিগও প্রস্তাবটি সমর্থন করে।
এ প্রস্তাবের জের ধরেই বেসামরিক লিবীয়দের সংরক্ষণের নামে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিমান বাহিনী গাদ্দাফির সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আক্রমণে অংশ না নিলেও তার ড্রোন পাইলটবিহীন বিমানগুলো গাদ্দাফির বাহিনী সম্বন্ধে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে আক্রমণকারী ব্রিটিশ ও ফরাসি বিমানগুলোকে সাহায্য করে। বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ড্রোনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ফরাসি বিমান গাদ্দাফির জন্মস'ান সিরতে শহরে এক মোটর কনভয়ের ওপর আক্রমণ চালায়। গাদ্দাফি ও তার পুত্র সে কনভয়যোগে সিরতে শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কর্নেল গাদ্দাফি অন্তত একটি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রাণ থাকতে তিনি লিবিয়া ছেড়ে যাবেন না। বাস্তবেও লিবিয়ার মাটিতেই তিনি নিহত হয়েছেন।
লিবিয়ার জনগণের গণতন্ত্রের সংগ্রামে ন্যাটোর, বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপ নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। এ দু’টি দেশের বক্তব্য ছিল, গাদ্দাফির সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ থেকে নিরীহ নাগরিকদের রক্ষা করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। অন্য দিকে সমালোচকেরা বলেছেন, গাদ্দাফিকে সরিয়ে লিবিয়ার বিশাল তেল ও গ্যাসের মজুদ হাতিয়ে নেয়াই পশ্চিমাদের মতলব ছিল। তাতে অবশ্যই সত্যতা আছে। গাদ্দাফি ধরা পড়ার পরের দিন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যানন ব্যবসায়ীদের বলেছেন, ‘স্যুটকেস প্যাক করে’ লিবিয়ায় ছুটে যেতে। তেল ও গ্যাসের চুক্তি ছাড়াও যে অসংখ্য ঘরবাড়ি ইমারত ও স'াপনা বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব মেরামতও বিশাল অঙ্কের ব্যবসায় হবে। ওয়াশিংটন লিবিয়ার যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ নেয়নি, কিন' কালবিলম্ব না করেই প্রেসিডেন্ট ওবামা যে ভাষণ দিয়েছেন কার্যত তাতে বলা হয়েছে, মার্কিন ভূমিকাও কারো চেয়ে কম ছিল না।
অপর দিকে এ কথাও সত্যি, লিবিয়ার জনসাধারণের গণতন্ত্রের আন্দোলন খুবই বাস্তব ছিল। খুব সম্ভবত গাদ্দাফি কিছু গণতান্ত্রিক সংস্কারে সম্মত হলে লিবীয়রা শান্ত হতো। গণতান্ত্রিক অধিকার না দিলেও গাদ্দাফি তেল রফতানির অর্থ থেকে লিবীয়দের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন' সংস্কারের পরিবর্তে তিনি যখন অস্ত্রবলে বেনগাজিতে এবং অন্যত্র বিদ্রোহীদের দমনের প্রয়াস পান, জনসাধারণ তখন আর আপসে রাজি ছিল না। এরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণ এবং ইঙ্গ-ফরাসি বিমান আক্রমণের আগেই বিদ্রোহীরা বেনগাজিসহ পূর্ব লিবিয়ার একটা বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছিল। অর্থাৎ তাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পূর্ণ খাঁটি ছিল, বিদেশী হস্তক্ষেপ তাদের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করেছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে লিবীয়দের মুক্তির সংগ্রামে চমৎকার মিল আছে। বাংলাদেশের জনসাধারণ গণতান্ত্রিক অধিকার আর অর্থনৈতিক সুবিচারের জন্য দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করে আসছিল। পাকিস্তানিরা তাদের ওপর সামরিক অভিযান চালানোর পর গণতন্ত্রের আন্দোলন স্বাধীনতার যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। বলতে গেলে তারা শূন্য হাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভারতের হস্তক্ষেপ সে স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করেছিল মাত্র।
লিবিয়ায় পশ্চিমারা হস্তক্ষেপ করেছিল তেলসম্পদের লোভে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হস্তক্ষেপের পেছনে ভারতেরও বিরাট লোভ ছিল। সেটা পাকিস্তানকে ভেঙে দেয়া। পশ্চিম ও পূর্ব উভয় সীমান্তেই ভারতকে একটা বৈরী রাষ্ট্র পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়ে থাকতে হচ্ছিল। ফলে তার প্রতিরক্ষা ব্যয় অসম্ভব রকম বেশি ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় পূর্ব সীমান্তে ভারতকে আর সুবিশাল প্রতিরক্ষা শক্তি মোতায়েন রাখতে হচ্ছে না। সে বাবদ প্রতি বছর তার সাশ্রয় হচ্ছে বহু, বহু শত কোটি ডলারের। ভারতের কাছে বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতা আছে। কিন' বাংলাদেশের কাছে ভারতের কৃতজ্ঞতা কোনো মতেই কম হওয়া উচিত নয়।

আরব বসন্ত : বহু ফাঁকি বহু কপটতা
প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আর প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রথমে দাবি করেছিলেন, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদ করছিলেন বলেই তারা ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করেছিলেন। সে মিথ্যাটা ধরা পড়ে যাওয়ার পর তারা বলেন, আসলে ইরাকিদের গণতন্ত্র আর স্বাধীনতাদানই তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল। লক্ষণীয় যে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যখন প্রথমে তিউনিসিয়ায় ও পরে মিসরে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান শুরু হয় পশ্চিমারা, বিশেষ করে ওয়াশিংটন, গোড়ায় তার বিরোধিতাই করছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়াই তিউনিসিয়ার জনগণ স্বৈরতন্ত্রী বেনআলিকে বিতাড়িত করে। মিসরেও হোসনি মোবারকের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠার পরই শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি ঘোষণা করেন। সত্যিকারভাবে ‘আরব বসন্তের’ আবির্ভাব ঘটে।
আরব বসন্তের ব্যাপারে পশ্চিমা, বিশেষ করে ওয়াশিংটনের মনোভাবে আরো বহু ফাঁকি আর কপটতা আছে। ইয়েমেনের গণতন্ত্রের আন্দোলন শুরু হয় তিউনিসিয়ার সমসাময়িকভাবে। বাহরাইনেও একটি গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে অস্ত্র বলে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাহরাইনে প্রায় এক হাজার আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে মনে করা হচ্ছে। সৌদি আরব দীর্ঘ এক সারি ট্যাঙ্ক আর এক হাজারেরও বেশি সৈন্য পাঠিয়ে রাজতন্ত্রকে সাহায্য করেছে। মাত্র কয়েক দিন আগে বাহরাইনের আদালত আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা করার দায়ে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্সদের পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
ইয়েমেনে ডিক্টেটর আলী আবদুল্লাহ সালেহ ট্যাঙ্ক কামান আর হেলিকপ্টার দিয়ে গণ-আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এ অভিযান পরিচালনা করছে প্রেসিডেন্টের পুত্রের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড বাহিনী। সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন জেনারেল মোহসেনের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিয়েছে। অর্থাৎ ইয়েমেনে এখন একটি পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ চলছে। কয়েক দিন আগের এক খবরে বলা হয়েছিল, এক সারি ট্যাঙ্ককে সৌদি আরব থেকে ইয়েমেনে আসতে দেখা গেছে। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে অন্তত হাজার দুয়েক লোক মারা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র কেন আধিপত্য বজায় রাখতে চায়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব ও আধিপত্য বজায় রাখতে চায় মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত মধ্যপ্রাচ্যের তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দ্বিতীয়ত, ইসরাইলকে পাকাপোক্তভাবে আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দেয়া। এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের প্রধান সুহৃদ আরব শাসকেরা। এ শাসকেরাই যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্রের ঢেউকে ঠেকিয়ে রাখতে চান। উপসাগরীয় দেশগুলোর স্বৈরশাসকদের সে জন্যই তারা সব রকমের সাহায্য-সমর্থন দিচ্ছেন। এই নির্ভরশীলতার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা উপসাগরীয় দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে উৎসাহ দেবে না। কিন' এখানেও গণতন্ত্রের কম্পন সুস্পষ্ট। সে জন্যই আরব সরকারগুলো তাদের বর্তমান বাজেটে গৃহায়ন, সমাজকল্যাণ ও বেকারভাতা বাবদ বাজেট বরাদ্দ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে, সৌদি নারীরা ২০১৫ সাল থেকে স'ানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিতে এবং প্রার্থী হতে পারবেন। কিন' এই সামান্য সংস্কারে বিশেষ করে সৌদি বুদ্ধিজীবীদের গণতন্ত্রের স্পৃহা মিটবে বলে মনে হয় না।
সবচেয়ে হিংস্র গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান এখন চলছে সিরিয়ায়। প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ ১৯৮২ সালে হোমা প্রদেশে সুন্নি বিদ্রোহ দমনের জন্য ২০ হাজার লোককে হত্যা করেছিলেন। তার পুত্র বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদও হিংস্রতার দিক থেকে কম যান না। দুই সপ্তাহ আগে জাতিসঙ্ঘের এক হিসাবে বলা হয়েছিল, গণতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সিরীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে তিন হাজারের বেশি লোক মারা গেছে। কিন' সিরিয়ার জনগণের আন্দোলনে মদদ দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ওয়াশিংটন কিংবা তার পশ্চিমা মিত্ররা দেখাচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ইসরাইলের কাছ থেকে গোলান মালভূমি ফিরে পাওয়ার বাসনা বারবার প্রকাশ করেছেন। ফিলিস্তিনের জঙ্গি হামাস দলকেও কিছু সাহায্য তিনি দিচ্ছেন, পশ্চিমা চাপ সত্ত্বেও দামেস্ক থেকে হামাসের শীর্ষ নেতাদের তিনি বহিষ্কার করেননি। অন্য দিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস কিংবা অন্য কোনো ফিলিস্তিনি জোটের গেরিলা আক্রমণকেও তিনি প্রশ্রয় দেননি। সেটা ওয়াশিংটনের একটা বড় বিবেচনা। ইসরাইলের অপর বড় প্রতিবেশী মিসরের সাথে ইসরাইলের শান্তিচুক্তি হয়েছিল। সাইনাই মালভূমিতে মিসরীয় সীমান্ত নিয়ে এতকাল ইসরাইল নিশ্চিন্ত ছিল- যেমন বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে তার পূর্ব সীমান্ত নিয়ে ভারত নিশ্চিন্ত আছে।

সিরিয়া ও নিরাপত্তা পরিষদ
কিন' মিসরে মোবারকের পতনের সময় থেকে ইসরাইল ও ওয়াশিংটন উৎকণ্ঠিত আছে। নির্বাচন হলে যারা মিসরে ক্ষমতায় আসবে তারা ইসরাইল সম্পর্কে কী মনোভাব অবলম্বন করবে বলা কঠিন। তবে এটা বলা যায়, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন হলে যাদের ক্ষমতা পাওয়ার সম্ভাবনা তারা ইসরাইলের প্রতি অনেক বেশি বিরূপ হবে। সে জন্যই মুখে আরব বসন্তের গুণগান করলেও ওয়াশিংটন বাশার আল আসাদের পতনের জন্য তেমন আগ্রহী নয়।
নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। পুরনো বন্ধুত্বের কারণে রাশিয়া অবশ্যই তেমন কোনো প্রস্তাবে ভেটো দেবে। ভেটো হয়তো চীনও দেবে, কেননা সিরিয়ার বেশির ভাগ তেলের খদ্দের হচ্ছে চীন আর ভারত। তা ছাড়া বোধগম্য কারণেই যুক্তরাষ্ট্র তেমন প্রস্তাব পাসের জন্য তদবিরও করেনি। কিন' বাশার আল আসাদ দীর্ঘকাল গণতন্ত্রীদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না। দশ মাস ধরে চললেও আন্দোলনকারীরা ক্ষান্ত হচ্ছেন না। অন্তত তিন হাজার হত এবং বহু হাজার লোক আহত হলেও তাদের আন্দোলন বরং আরো তীব্র হচ্ছে। এবং সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, রাশিয়া ও চীন আরো কঠোর ভাষায় সিরীয় সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যা ও নির্যাতনের সমালোচনা করছে।
রূপকথার আলাদিন কৌতূহলের বশে বোতল থেকে দৈত্যকে মুক্তি দিয়ে ফেলেছিল। সে দৈত্য আর ফিরে যাবে না। অত্যন্ত সুকৌশলে আলাদিন তাকে বোতলে পুরে ছিপি বন্ধ করে দিতে পেরেছিল। কিন' আরব বিশ্বে যে গণতন্ত্রের দাবি শুরু হয়েছে, বোতল থেকে মুক্ত হয়েছে, সে দাবিকে আবার বোতলে ফেরত পাঠানোর মন্ত্র ওয়াশিংটনেরও জানা আছে বলে আমার মনে
হয় না।
লন্ডন, ২৬-১০-১১
লেখক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট
serajurrahman@btinternet.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন